লালবাগ কেল্লা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন, যা পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য উদাহরণ এই কেল্লা বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচীন এই স্থাপত্যকীর্তি আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে রাখে।
সূচিপত্র
লালবাগ কেল্লার ইতিহাস
লালবাগ কেল্লার নির্মাণ শুরু হয় ১৬৭৮ সালে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ আজম শাহের তত্ত্বাবধানে। তবে কাজটি কখনোই সম্পূর্ণ হয়নি। যুবরাজ আজম শাহ দিল্লিতে ফিরে গেলে সুবাদার শায়েস্তা খান নির্মাণকাজ চালিয়ে যান। কিন্তু তার মেয়ে পরীবিবির অকালমৃত্যুর পর কেল্লার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
প্রথমদিকে এই দুর্গটি আওরঙ্গাবাদ দুর্গ নামে পরিচিত ছিল। পরে এর নাম হয় লালবাগ কেল্লা, কারণ এটি লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর এটি ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে যায় এবং কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।
স্থাপত্য ও প্রধান আকর্ষণ
লালবাগ কেল্লা মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন। ত্রিভুজাকার এই দুর্গে বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে, যা এর গৌরবময় অতীতের সাক্ষী।
পরীবিবির মাজার
সাদা মার্বেলের তৈরি পরীবিবির মাজারটি কেল্লার অন্যতম আকর্ষণ। এটি একটি উঁচু চত্বরে অবস্থিত, যার চারপাশে সিমেট্রিক্যাল ডিজাইনের বাগান রয়েছে। মুঘল স্থাপত্যের শীর্ষ নিদর্শন হিসেবে এটি আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
দরবার হল
মুঘল আমলের রাজকীয় সভাগৃহ হিসেবে পরিচিত দরবার হল কেল্লার কেন্দ্রীয় স্থাপনা। এর অভ্যন্তরে পাথরের খোদাই ও অলংকৃত নকশা আজও মুঘল ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে।
শাহী মসজিদ
লালবাগ কেল্লার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই মসজিদটি তিনটি গম্বুজ এবং খিলানযুক্ত। মসজিদের দেয়ালে ইসলামী কারুকার্য ও পুষ্পল নকশা রয়েছে।
উদ্যান ও জলাধার
কেল্লার অভ্যন্তরে সুন্দর উদ্যান এবং জলাধার রয়েছে, যা প্রাচীনকালে পানি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই জলাধার এবং উদ্যান এলাকাটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
লালবাগ কেল্লার চারপাশে শক্ত পাথরের দেয়াল এবং কামান বসানোর মাচা ছিল, যা শত্রুর আক্রমণ থেকে কেল্লাটিকে রক্ষা করত। এই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা মুঘল সামরিক কৌশলের নিদর্শন।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে লালবাগ কেল্লা
আজ লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ইতিহাসের এই মহামূল্যবান নিদর্শন দেখতে আসেন। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে।
উপসংহার
লালবাগ কেল্লা শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়; এটি বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক মহামূল্যবান অংশ। প্রতিটি ইট যেন অতীতের গল্প বলে। আজকের প্রজন্মের জন্য এটি ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার এক অনন্য মাধ্যম। কেল্লার সুরক্ষা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
সময়সূচি
দিন | সময় |
---|---|
বৃহস্পতিবার | সকাল ১০টা – দুপুর ১টা, দুপুর ১:৩০ – বিকেল ৫টা |
শুক্রবার | সকাল ১০টা – ১২:৩০টা, বিকেল ৩টা – বিকেল ৫টা |
শনিবার | সকাল ১০টা – দুপুর ১টা, দুপুর ১:৩০ – বিকেল ৫টা |
রবিবার | বন্ধ |
সোমবার | দুপুর ২টা – ৫টা |
মঙ্গলবার | সকাল ১০টা – দুপুর ১টা, দুপুর ১:৩০ – বিকেল ৫টা |
বুধবার | সকাল ১০টা – দুপুর ১টা, দুপুর ১:৩০ – বিকেল ৫টা |
মানচিত্র
গুগলের মানচিত্রে লালবাগ কেল্লা।