প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের পরিচিয় করে দিব ঢাকা শহরের কাছাকাছি অবস্থিত দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি নবাবগঞ্জের কলাকোপার প্রায় দুইশত বছর আগের প্রাচীন কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি ও এর আশপাশের প্রাচীন প্রসাদের সাথে। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকুপায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাসের আদর্শ নিদর্শন।
সূচিপত্র
জমিদার পরিবার
ঢাকার পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদারের বংশধরের একটি বংশ প্রায় দুইশত বছর পূর্ব থেকে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপায় বসবাস করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য চারদিকে নদী বেষ্টিত এই এলাকায় তারা কয়েকশো বছর আগে থেকে বসবাস শুরু করে। মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদারের বংশধর যখন কলাকুপায় বসতি স্থাপন করেন তখন মানিকগঞ্জ থেকে কলাকোপা শুধুমাত্র নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল, এছাড়া অন্য কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে।
জানা যায় যে কলকাতা ও লন্ডনের সাথে তাদের বাণিজ্য ছিল, লবণ ব্যবসা-ই ছিল তাদের প্রধান পণ্য। বাবু রাধারমন রায় ও হরেন্দ্র নাথ সাহা এই এলাকায় প্রখ্যাত লবণ ব্যবসায়ী ছিলেন। কলাকুপায় শাহা ও রায় পরিবারের মধ্যে লবণ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা ছিল। এই দুই পরিবারের মধ্যে রায় পরিবার স্থানীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বাবু রাধারমন রায়.১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলাকুপায় তার মায়ের নামে কলাকোপায় প্রায় ১০ একর জায়গা একক দানের মাধ্যমে কোকিলপেয়ারি উচ্চবিদ্যালয় নামের স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করেন। এরকম প্রবাদ রয়েছে শোনা যায় তাদের মধ্য থেকে তিনটি শরিক যখন বিভক্ত হয়ে যায় তখন তাদের যে সকল সোনা দানা গহনা এগুলো তারা ভাইদের মধ্যে ভাগ করে নেন ধামা দিয়ে, এ থেকেই বোঝা যায় তারা কি পরিমাণ ধন সম্পদ লবণ ব্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন।
জমিদার বাড়ির ইতিহাস
১৮০০ শতকের দিকে চার একর জমিতে ব্রজনরায় জমিদার এই বাড়িটি তৈরি করেন। তিনি সুদর্শন রায় হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।
এখানকার জমিদার রাধারমরায় পরবর্তীতে তার মায়ের নামে বাড়িটির নামকরণ করেছিলেন।
রাজবাড়ীর বর্তমান অবস্থা
রাধারমন রায় লবণ ব্যবসায়ী হলেও তাদের প্রাচীন বাড়িটিকে স্থানীয় লোকজন রাজবাড়ী হিসেবেই চিনে থাকেন। দুইশত বছর আগের এই রাজবাড়ীটি প্রায় এখনো সম্পূর্ণ অটুট ও অক্ষত রয়েছে। রাধারমন রায়রা তিন ভাই ছিলেন, তারা সংসারের জন্য আলাদা হয়ে মূল ভবনের নিকটেই আরো দুটি অট্টালিকা নির্মাণ করেন, বর্তমানে এই দুটি ভবনের একটি উকিলবাড়ী এবং আরেকটি জজবাড়ী নামে পরিচিত। মূল ভবনটি বর্তমানে কোকিলপেয়ারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উকিল বাড়ি এবং জজবাড়ী বর্তমানে ক্রয় সূত্রে ব্যক্তি মালিকানাধীন।
পর্যটন সম্ভাবনা
নবাবগঞ্জের কলাকোপার এই প্রাচীন অট্টালিকা দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের আগমন ঘটতে থাকে। কখনো কখনো বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে। স্থানীয়রা মনে করেন রাজবাড়ীটি সংস্কার করলে দেশ ও বিদেশী পর্যটক বৃদ্ধি পাবে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার গুলিস্তান বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি আধা ঘন্টা পর পর ছেড়ে যায় মইনোর ঘাটের বাস এই রুটের যেকোনো বাসে উঠেই খুব সহজেই যাওয়া যায় কলাকুপা এলাকায়। গুলিস্তান থেকে কলাকুপা রুটের জনপ্রতি ভাড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাসে করে না গিয়েও আপনারা প্রাইভেটকার বা সিএনজি করেও খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন কলাকোপা থেকে। বাসে করে গেলে ঢাকার গুলিস্তান থেকে কলাকোপা যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘন্টা।