বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলা কেবল ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বে নয়, বরং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও বেশ সমৃদ্ধ। এরই একটি অন্যতম নিদর্শন হলো সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক, যা সংরক্ষিত বনভূমি, বিরল উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী, পাহাড়ি ঝরনা ও সবুজের অপূর্ব সমন্বয়ে গঠিত এক প্রকৃতির লীলাভূমি। এটি শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, গবেষক, প্রকৃতিপ্রেমী ও শিক্ষার্থীদের কাছেও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
সূচিপত্র
প্রতিষ্ঠা ও উদ্দেশ্য
সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে, বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল:
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ,
- বিপন্ন ও বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীর নিরাপদ আবাস গড়ে তোলা,
- পরিবেশ ও প্রকৃতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি,
- পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকো-ট্যুরিজম) উৎসাহিত করা,
- শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ তৈরি করা।
অবস্থান ও পরিবেশ
এই ইকো পার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে সীতাকুন্ড উপজেলায় অবস্থিত। এটি প্রায় ৮০২ হেক্টর জমির উপর বিস্তৃত, যার একটি বড় অংশ পাহাড়, টিলা ও ঘন বনভূমি দিয়ে গঠিত। এটি বরদ্বারহাট রোড থেকে সহজে পৌঁছানো যায় এবং এর প্রবেশপথে রয়েছে একটি প্রশস্ত গেট ও টিকিট কাউন্টার।
উদ্ভিদ ও প্রাণীজ সম্পদ
সীতাকুন্ড ইকো পার্ক একটি জীবন্ত উদ্ভিদ জাদুঘর। এখানে রয়েছে:
- ৩৫টি স্থানীয় প্রজাতির বৃক্ষ
- ২০টির বেশি বিদেশি উদ্ভিদ প্রজাতি
- বিপন্ন ও ঔষধি গাছপালা
- বিভিন্ন ফুলগাছ ও লতাগুল্ম
এছাড়াও, এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী, যেমন:
- বানর, কাঠবিড়ালি, গিরগিটি, সাপ
- বন্য পাখি: ময়না, টিয়া, ডাহুক, বুলবুল
- প্রজাপতি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ
এই উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল সংরক্ষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই পার্ক।
দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণ
সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর থাকে। পার্কে রয়েছে:
- পায়ে হাঁটার নির্ধারিত ট্রেইল
- পাহাড়ি ঝরনা ও ছোট সাঁকো
- বিশ্রামের জন্য ছায়াঘেরা বেঞ্চ ও ছাউনি
- পর্যবেক্ষণ টাওয়ার
- পিকনিকের জন্য নির্ধারিত স্থান
এখানে ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে উঠে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখানে থেকে সমুদ্র ও পুরো সীতাকুন্ড এলাকার এক অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
শিক্ষা, গবেষণা ও ইকো-ট্যুরিজম
সীতাকুন্ড ইকো পার্ক কেবল বিনোদনের জায়গা নয়, এটি একটি পরিবেশ শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করছে। এখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্য শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য এক বাস্তব জীববৈচিত্র্য পাঠশালা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এখানে গবেষণামূলক ভ্রমণে আসে।
এছাড়াও, ইকো-ট্যুরিজমের বিকাশে এই পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে এই পার্ক সমাজ ও প্রকৃতির মাঝে একটি ভারসাম্য বজায় রাখছে।
উপসংহার
সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক কেবল একটি পার্ক নয়, এটি একটি জীবন্ত শিক্ষাঙ্গন, একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র এবং একটি প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থল। প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধনের এক অনন্য নিদর্শন এই পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত, যারা প্রকৃতির মাঝে একটু শান্তি খুঁজে নিতে চান। এটি ভ্রমণপিপাসু, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই একবার ঘুরে দেখার মতো স্থান।
প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচি
- প্রবেশমূল্য: মাত্র ৫ টাকা (শিক্ষার্থী ও শিশুদের জন্য বিশেষ ছাড় থাকতে পারে)
- খোলা থাকে: রবিবার ছাড়া, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত
- ছুটি: সরকার নির্ধারিত ছুটির দিনেও খোলা থাকে (বিশেষ উপলক্ষে সময় পরিবর্তন হতে পারে)
মানচিত্র
গুগলের মানচিত্রে সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক:
মন্তব্য করুন